শিবমহাপুরাণোক্ত দারুবনে শিবলিঙ্গ প্রসঙ্গকে অশ্লীল আখ্যা দেয়া অসনাতনীদের আস্ফালনের নিষ্পত্তি
আমরা শিব প্রেমীরা কখনো কারোর ব্যক্তিগত আস্থার উপর আঘাত করিনি, আমরা কখনোই কোনো রকমভাবে কোনো সম্প্রদায়কে উদ্দ্যেশ্য করে কটুক্তি করিনি, কারণ, আমদের শিক্ষা কখনোই অন্য সম্প্রদায়ের ব্যক্তিবর্গদের অপমানিত করার শিক্ষায় শিক্ষিত করেনি, আমাদের শিক্ষা সর্বদা সৌজন্যমূলক চিন্তা করতে শেখায়, সকলকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করতে শেখায়, কারণ আমরা বিশ্বাস করি আমাদের আরাধ্য অদ্বিতীয় পরমেশ্বর শিব তিনি সকলের অন্তরে বিরাজমান, তাই কাউকে অকারণে আঘাত করা আমাদের নীতিবিরুদ্ধ।
কিন্তু যখন কোনো অপসংস্কৃতির ভাইরাস আমাদের পরমেশ্বর শিবের নামে মিথ্যাচার করে শিবনিন্দা প্রচারের মাধ্যমে শিব মাহাত্ম্যকে অপমানিত করে তখন আমরা শৈব সনাতনীরা মৌনতা ভঙ্গ করে প্রতিবাদ করতে বাধ্য হই।
বেশ কিছুকাল ধরে স্যোশাল মিডিয়ায় সনাতন ধর্মের ছদ্মবেশ নিয়ে থিয়োসোফিকাল সোসাইটি নামক একটি ম্লেচ্ছ সংস্থা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, যার বর্তমান নাম হল - বাংলাদেশ অগ্নিবীর, যা আর্যসমাজ এর পরিপন্থী,এই আর্যসমাজের প্রতিষ্ঠাতা দয়ানন্দ সরস্বতী, এদের কাজ হল পুরাণ শাস্ত্র থেকে কিছু শ্লোক তুলে নিয়ে তার মিথ্যাচার করে সমগ্র পুরাণ শাস্ত্রকে কাল্পনিক, অশ্লীল, অবৈজ্ঞানিক, বেদবিরুদ্ধ বলে যেনতেন প্রকারে প্রমাণ করা, তারই সাথে নিজেদের দলে জনসাধারণকে টেনে দল ভারী করা ।
পুরাণের নামে করা আর্যসমাজীদের মিথ্যাচার গুলো নিয়ে নাস্তিকরা এবং যবনরা খুব উপকৃত হয়। নাস্তিক ও যবনরা খুব আনন্দের সহিত শাস্ত্র সম্পর্কে না জানা এমন সাধারণ সনাতনীদের এইসব মিথ্যাচার গুলি তুলে ধরে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়, তখন সাধারণ সনাতনীরা কোনো উত্তর দিতে পারে না, তারাও বিভ্রান্ত হয়ে যায়, কেউ কেউ সনাতন ধর্ম ত্যাগ করে ম্লেচ্ছ যবন হয়ে যায় অথবা নাস্তিক হয়ে যায়।
আমরা এক প্রকার বাধ্য হয়ে এই অপসংস্কৃতির ভাইরাসদের দাবীগুলির বিশ্লেষণ করে সত্যতা সামনে তুলে ধরতে প্রয়াসী হয়েছি পরমেশ্বর শিবের কৃপায়।
👉এই অসনাতনী অপসংস্কৃতিদের বহু দাবীর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য দাবী হল - শিবমহাপুরাণে দারুবনে শিব নগ্ন হয়ে হাতে নিজের পুরুষাঙ্গ ধরে উপস্থিত হয়েছিল, তা দেখে ঋষিপত্নিরা তার সাথে সংগম করতে উদ্যত হয়েছিল, এগুলো দেখে ঋষিগণ অভিশাপ দিয়েছিলেন, ফলে শিবের পুরুষাঙ্গ খসে যায় যায়, আর সেই শিবের পুরুষাঙ্গ অর্থাৎ লিঙ্গ সব ধ্বংস করতে শুরু করলো, তখন পার্বতী নিজের স্ত্রী অঙ্গ যোনীতে সেই শিবের পুরুষাঙ্গ শিবলিঙ্গকে ধারণ করেছে, ফলে এই অশ্লীল লিঙ্গযোনীকে সনাতনীরা পূজা করছে যা চরম অসভ্যতার প্রতিক। সুতরাং পুরাণের এইসব অশ্লীল লিঙ্গযোনী পূজাকে ত্যাগ করা উচিত।
(নাস্তিকরা বলবে, যখন সনাতনীদের ভগবানেরই চরিত্র এমন, তাহলে এমন ভগবানকে কেন মানবো ?
আবার ম্লেচ্ছ যবনরা বলবে, এসব চরিত্রহীন ভগবান ছেড়ে আমাদের শান্তির মতবাদ গ্রহণ করো)
- উপরোক্ত এসমস্ত দাবীর চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হবে শিবমহাপুরাণ থেকে।
দেখা যাক
আদৌও পরমেশ্বর শিবের চরিত্র কলঙ্কিত কি না ?
আদৌও শিবের পুরুষাঙ্গই কি শিবলিঙ্গ ?
যোনী বলতে কি মাতা পার্বতীর স্ত্রী অঙ্গকে বোঝানো হয়েছে ?
চলুন প্রত্যেকটি শ্লোক ধরে ধরে বিচার করি।
ॐ গাং গণেশায় নমঃ
নমঃ শিবায়
আমাদের পুরাণ মান্যতা সম্পর্কে অপসংস্কৃতির বাহকদের কিছু জিনিস প্রথমে জেনে রাখা উচিত ।
১) পুরাণ শাস্ত্রের কিছু অংশ তুলে যখন তার বিপক্ষে প্রশ্ন তোলা হয় তখন প্রশ্নকারীদের এটাও স্বীকার করতে হবে যে, উত্তর প্রদান করবার সময়ে তার বিশ্লেষণ পুরাণ থেকে প্রাপ্ত হলে সেটিও গ্রহন করতে হবে।
২) পুরাণ শাস্ত্রে কল্পের কথা রয়েছে, তাই এক এক কল্পে এক এক দেবতার মাহাত্ম্য প্রকাশিত হয়েছে, আর সেই কারণে এক এক পুরাণে এক এক দেবতাদের শ্রেষ্ঠ হিসেবে দেখানো হয়েছে। একই ঘটনা বিভিন্ন কল্পে বারংবার ঘটেছে বিভিন্ন ভাবে ঘটেছে। যেমন - একটি কল্পে মহিষাসুরকে স্বয়ং মাতা পার্বতী বধ করেছেন, আবার অন্য কল্পে মাতা পার্বতীর থেকে প্রকটিত চণ্ডীদেবী মহিষাসুরকে বধ করেছেন। কিন্তু মূল ঘটনা হল দেবী দ্বারা মহিষাসুর বধ। তাই কখনো কোনো পুরাণ পারস্পরিক দ্বন্দে লিপ্ত নয়। যাদের মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটেনি, তারাই আংশিকভাবে পুরাণ পড়ে কটুক্তি করে পুরাণের নিন্দা করতে অগ্রসর হয়।
৩) পুরাণে বর্ণিত রীতিনীতির মধ্যে অনেক রীতিনীতি বর্তমানযুগে পালন করবার মতো উপযুক্ত নয়, সুতরাং স্থান কাল পাত্র ভেদে এক একটি নিয়ম নির্দেশ কার্যকরী হয়, উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, অশ্বমেধ যজ্ঞ পূর্বকালে অনুষ্ঠিত হলেও কলিযুগের বর্তমান সময়ে তা অনুষ্ঠিত হওয়া সম্ভব নয়।
৪) পুরাণে বর্ণিত বহু পূজা পার্বণ আজও বিভিন্ন পরম্পরার মাধ্যমে পালিত হয়ে আসছে, অতএব, পুরাণ মান্যকারী সনাতনীদের কাছে গুরুপরম্পরার মান্যতাও বিশেষ স্থান আছে । যেমন - ত্রিপুণ্ড্র ও রুদ্রাক্ষ ধারণ করা সকল শৈব তথা গুরুপরম্পরার একটি বিশেষ অঙ্গ, শিবমহাপুরাণোক্ত ত্রিপুণ্ড্র ধারণের নির্দেশ কে শৈব তথা গুরুপরম্পরায় মান্য করা হয়।
৫) বর্তমানে বহু পুস্তক পাবলিকেশনের প্রকাশিত পুরাণ শাস্ত্রের অন্তর্গত বিভিন্ন খণ্ড, বিভিন্ন অধ্যায়, বিভিন্ন সংহিতা বাদ দিয়ে দেওয়া হয় অথবা তার স্থানে নূতন সংহিতার আমদানি করা হয়, যেমন - বাংলার নবভারত পাবলিকেশন এর দ্বারা প্রকাশিত শিবমহাপুরাণ নামক পুস্তকে জ্ঞানসংহিতা, ধর্ম সংহিতা, সনৎকুমার সংহিতা নামক তিনটি নূতন সংহিতা আমদানি করা হয়েছে, যা প্রকৃত শিবমহাপুরাণের ৭টি সংহিতার গণনার মধ্যেই পড়েনা, সুতরাং, শিবমহাপুরাণের নামে মিথ্যাচার করার জন্য যদি কোনো অপসংস্কৃতি জ্ঞানসংহিতার শ্লোক, ধর্ম সংহিতার শ্লোক নিয়ে কটুক্তি করে তবে তা আমাদের দ্বারা বিশ্লেষণ করার বিষয় নয়। কারণ এই তিনটি অবার্চিন সংহিতা আমরা শৈব সনাতনীরাই অগ্রহণযোগ্য বলে জ্ঞাত আছি।
আমাদের কাছে,
১) বিদ্যেশ্বর সংহিতা,
২) রুদ্র সংহিতা,
৩) শতরুদ্র সংহিতা,
৪) কোটিরুদ্র সংহিতা,
৫) উমাসংহিতা,
৬) কৈলাস সংহিতা,
৭) বায়বীয় সংহিতা - এই সাতটি সংহিতাই শিবমহাপুরাণ হিসেবে মান্য, এর বাইরে অন্য কোনো সংহিতা আমাদের শিবমহাপুরাণ বলে গণ্য নয়। বিদ্যেশ্বর সংহিতার অন্তর্গত ২নং অধ্যায়ে শিবমহাপুরাণের পরিচয়ে এই সাতটি সংহিতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং জ্ঞানসংহিতা নামক কাল্পনিক সংহিতাকে শিবপুরাণ বলে চালিয়ে সেটি থেকে অশ্লীল কাহিনী তুলে ধরে শিবচরিত্রে কালিমা লেপন করার মতো শিশুসুলভ উচ্ছাস করে লাভ নেই। আমাদের কাছে জ্ঞানসংহিতা মান্যই নয়।
এবার শুরু করা যাক মূল বিষয়।
শিবমহাপুরাণের কোটিরুদ্রসংহিতার অন্তর্গত ১২নং অধ্যায়ে পরমেশ্বর শিবের বিভিন্ন লিঙ্গের মধ্যে একটি বিশেষ মাহাত্ম্যপূর্ণ হাটকেশ্বর লিঙ্গের কথন বর্ণিত হয়েছে। যা দারুবন বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত ।
(মনে রাখতে হবে, শিবমহাপুরাণোক্ত এই ঘটনাটি অনেকগুলি কল্পের মধ্যে একটি কল্পের অনুযায়ী বর্ণনা করা হয়েছে)
।। হাটকেশ্বর লিঙ্গের প্রাদুর্ভাব এবং মাহাত্ম্যের বর্ণন।।
।। ঋষয় উবাচ ।।
সূত জানাসি সকলং বস্ত ব্যাসপ্রসাদতঃ ।
তবাজ্ঞাতম ন বিদ্দেত তস্মাৎপৃচ্ছামহে বয়ম্ ॥১
লিঙ্গগম চ পুজ্যতে লোকে তত্ত্ব্যা কথিতং চ যৎ ।
তওথৌব ন চান্যদ্দা কারণং বিদ্দতে ত্বিহ ॥২
সরলার্থ :
হে সূতজী! আপনি ব্যাসদেবের কৃপায় সব কিছু জানেন, কোনো কিছুই আপনার অজানা নয় ॥১
আপনি পূর্বে বলেছিলেন সর্ব লোকে শিবলিঙ্গের পূজা হয়। উনি কি লিঙ্গ হওয়ার কারণে পূজিত নাকি অন্য কোনো কারণ আছে ? ॥২
বাণরূপা শ্রুতা লোকে পার্বতী শিববল্লভা।
এতত কিং কারণং সূত কথয় ত্বং যথাশ্রুতম্ ॥৩
সরলার্থ :
শিববল্লভা পার্বতীকে সর্ব লোকে বাণলিঙ্গরূপা¹ বলা হয়ে থাকে। হে সূতজী! এর কারণ কি, এই বিষয়ে আপনি যা শুনেছেন তা আমাদের বলুন ॥৩
[বিশ্লেষণ : (1) পার্বতীকে সর্ব লোকে বাণলিঙ্গরূপা - দেখুন, প্রথমেই জিজ্ঞাসা করে বলা হয়েছে যে বাণলিঙ্গরূপা হিসেবে দেবী পার্বতী কেন বিখ্যাত ? সেটির উত্তর সূতজী দিচ্ছেন। অতএব, শিব বাণলিঙ্গ, আর শিবপত্নী পার্বতী বাণলিঙ্গরূপা অর্থাৎ বানলিঙ্গের বেদী/পীঠভাগ। এটিই এখানে প্রথমে ইঙ্গিত করা হয়েছে। চলুন এবারে পরবর্তী শ্লোকগুলি দেখা যাক..
।।সূত উবাচ।।
কল্পভেদকথা চৈব শ্রুতা ব্যাসান্ময়া দ্বিজাঃ।
তামেব কথয়াম্যদ্য শ্রুয়তামৃষি সওমাঃ ॥৪
সরলার্থ : সূত মুনি বললেন,
হে ব্রাহ্মণগণ! হে ঋষিসত্তমো! আমি ব্যাসজীর থেকে যে কল্পভেদ এর কাহিনী শুনেছি, তাই আজ বর্ণন করছি, আপনারা তা শ্রবণ করুন।।৪
[বিশ্লেষণ : সূতজী ঋষিদের বললেন যে তিনি তার গুরু ব্যাসদেবের কাছে এই কাহিনী শুনেছেন সেটি প্রতি কল্পে কল্পে ঘটে থাকে, আর এই কল্পভেদ কথার অর্থ হল বিভিন্ন কল্পে বিভিন্ন ভাবে এই একই ঘটনা ঘটে থাকে, সুতরাং অনান্য পুরাণসমূহে আলাদা ভাবে বর্ণিত এই দারুবনের কাহিনীটি সূতমুনি জানেন এবং তার মধ্যে থেকে তিনি বেছে প্রকৃত কাহিনীটি বলবেন, এটিই এখানে বোঝানো হয়েছে, আর্যসমাজী ম্লেচ্ছ যবনদের কাছে এই কল্পকল্পান্তরের ভেদ বিষয়ে কোনো ধারণাই নেই তাই তারা পুরাণগুলোকে স্ববিরোধী ঠাওর করে।]
পুরা দারুবনে জাতং য়দ্ বৃওং তু দ্বিজন্মনাম্ ।
তদেব শ্রুয়তাম সম্যক্ কথয়ামি যথাশ্রুতম্ ॥৫
দারুনাম বনং শ্রেষ্ঠং তএাসন্ ঋষিসওমাঃ ।
শিবভক্তাঃ সদা নিত্যং শিবধ্যানপরায়ণাঃ ॥৬
সরলার্থ :
পূর্বকালে দারুবনে ব্রাহ্মণদের সাথে যে ঘটনা ঘটেছিল তাই আপনারা শুনুন। যেরকম আমি শুনেছি, সেরকমই আপনাদের বলছি।
হে ঋষিসত্তমো! দারু নামক যে শ্রেষ্ঠ বন আছে সেখানে নিত্য শিবের প্রতি ধ্যানরত শিবভক্তরা (ব্রাহ্মণরা) থাকতো।।৫-৬
ত্রিকালং শিবপূজাং চ কুর্বন্তি পরম নিরন্তরম্।
নানাবিধৈঃ স্তবৈর্দিব্যৈস্তুষ্টুবুস্তে মুনীশ্বরাঃ ॥৭
তে কদাচিদ্বনে য়াতাঃ সমিধাহরণায় চ।
সর্বে দ্বিজর্ষভাঃ শৈবাঃ শিবধ্যানপরায়ণাঃ ॥৮
সরলার্থ :
হে মুনিশ্বর! তারা ত্রিকালেই সর্বদা শিবের পূজা করত ও নানা প্রকার স্তোত্রের দ্বারা তার স্তুতি করতো। শিবধ্যানে মগ্ন সেই শিব ভক্ত শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণগণ কোনো এক সময় (যজ্ঞের জন্য) সমিধা সংগ্রহ করার জন্য বনে গিয়েছিল ।।৭-৮
এতস্মিন্ন্মতরে সাক্ষাচ্ছংকরো নীললোহিতঃ ।
বিরূপং চ সমাস্থায় পরীক্ষার্থং সমাগতঃ ॥৯
দিগম্বরোহ্তিতেজস্বী ভুতিভুষণভুষিতঃ ।
স চেষ্টামকরোহূষ্টাং হস্তে লিঙ্গম বিধারয়ন্ ॥১০
সরলার্থ :
এরই মধ্যে তাদের পরীক্ষা¹ নিতে সাক্ষাৎ নীললোহিত শঙ্কর² বিকট রূপ ধারণ³ করে সেখানে উপস্থিত হন। দিগম্বর⁴, ভস্মরূপ ভূষণে ভূষিত⁵ মহাতেজস্বী ভগবান শঙ্কর হস্তে [তেজোময়] লিঙ্গ ধারণ⁶ করে বিচিত্র লীলা করতে লাগলেন⁷ ॥৯-১০
[বিশ্লেষণ : (1) উপরোক্ত ৯নং শ্লোক ও ১০নং শ্লোকে সর্বপ্রথম বলা হয়েছে যে, প্রভু শঙ্করের উক্ত দারুবনে উপস্থিত হবার হেতু হল - পরীক্ষা করা, এখানে কোনো অশ্লীল ঘটনা ঘটানোর উদ্দেশ্যে নেই।
(2) এখানে ভগবান নীললোহিত শঙ্করের কথা বলা হয়েছে, অর্থাৎ শৈবদের শাস্ত্র অনুযায়ী সাকার ব্রহ্ম সদাশিবের হৃদয় থেকে উদ্ভূত রুদ্রদেব, যিনি ব্রহ্মার কপাল থেকে গুণযুক্ত হয়ে লোকাচার বশতঃ ব্রহ্মারপুত্ররূপে প্রকটিত হয়েছিলেন, ত্রিগুণাতীত সদাশিবের লীলামূর্তি হল সেই গুণযুক্ত রুদ্রদেব, এই রুদ্রদেবকেই নীললোহিত শঙ্কর বলে এখানে উল্লেখ করা হয়েছে, যদিও অপসংস্কৃতির ভাইরাসরা এসব তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণের কথা শোনার পরিপন্থী নয়, তবুও বলছি শুধুমাত্র এটা বোঝানোর জন্য যে, দারুবনে উপস্থিত হয়ে ছিলেন শিবের একটি লীলামূর্তি, আমাদের আরাধ্য সাক্ষাৎ সদাশিব তিনি না কারোর পরীক্ষা নিতে আসেন, না তিনি যুদ্ধ করেন, না তিনি কারোর প্রশংসা করেন, সেই সদাশিব জগতকে তার লীলা দেখানোর জন্য একটি গুণাত্মক লীলামূর্তি প্রকট করে তার মাধ্যমে জাগতিক ক্ষেত্রে শিবলীলা ঘটিয়ে থাকেন। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন 👇
(3) বিকটরূপ ধারণ বলার অর্থ হল - ভগবান শঙ্কর নিজের অভূতপূর্ব পার্বতীপতি রূপে সেখানে না গিয়ে বরং আরেকটি অন্য ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছিলেন পরীক্ষা করবার নিমিত্তে । অর্থাৎ এখানে পরিষ্কার ভাবেই বোঝা যাচ্ছে যে মহেশ্বর নিজ স্বরূপে সেখানে উপস্থিত হননি।
(4) দিগম্বর উল্লেখ করা হয়েছে, দিগম্বর কথার অর্থ বস্ত্রহীন । আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে ভগবান শিব দেবদারু বনে পরীক্ষার নিমিত্তে ছদ্মরূপ ধারণ করে গিয়েছেন, সুতরাং যিনি পরমেশ্বর তিনি যে সাধারণ পরীক্ষা করবেন না সেটা তো বলার অপেক্ষা রাখে না, তার পরীক্ষা কঠিন হয় বলেই তা কথন হিসেবে এখনও ভক্তিসহকারে ভক্তগণ পঠনপাঠন করে চলেছেন। দিগম্বর হয়ে পরীক্ষা নেবার পেছনে কারণ রয়েছে, নয়তো দেবদারু বনে ওইরূপেই উপস্থিত হবার প্রয়োজনই ছিল না, বর্তমানেও আমরা বস্ত্রহীন নাগাসাধুদের দেখতে পাই, তাদের বহিরাঙ্গের দৃশ্য সাধারণ মানুষের মতো নয়, বরং সংসারীদের কাছে সেগুলো বিকটরূপ বলেই গ্রহণীয়। সুতরাং বিকটরূপধারী দিগম্বর রূপ ধারণ করা হয়েছে শুধু পরীক্ষার নিমিত্তে।
(5) ভস্মরূপ ভূষণে ভূষিত বলা হয়েছে, এর কারণ হল দিগম্বর সন্ন্যাসী সাধুরা ভস্ম সর্বাঙ্গে বিভূষিত করেই বিচরণ করেন। এতে পর্যন্ত বোঝা গেল যে, ভগবান শিব পরীক্ষার নিমিত্ত যে রূপটি ধারণ করেছেন তা একজন সন্ন্যাসীর বেশ, সন্ন্যাসীগণ নিবৃত্তিমার্গী হন, কারণ তারা প্রবৃত্তিমার্গ ত্যাগ করেন অর্থা সদা সর্বদার জন্য দেহের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি জাগতিক কামনা বাসনা ত্যাগ করে ইন্দ্রিয়কে নিয়ন্ত্রণ করে নেন। এই জন্য তাদের বলা হয় নিবৃত্তিমার্গী। এই কারণেই তারা সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিতে দেহের উপর আরোপিত জাগতিক লাজ লজ্জার ঊর্ধ্বে উঠে যান, তাদের ভাবনা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, তারা মনে করেন দেহ মায়া দিয়ে তৈরি একটি পোশাক মাত্র, তাই তারা এমন ভাবধারা পোষন করে নির্দ্বিধায় বিচরণ করেন। এতে অবাক হবার কিছু নেই।
(6) হস্তে লিঙ্গধারণ - এই শব্দটাকে নিয়ে অপসংস্কৃতির ভাইরাসরা কটুক্তি করে, তারা এই শব্দটিকে সাজিয়ে গুছিয়ে মশলা যুক্ত করে তাদের মনের মতো আরো সুন্দর ভাবে বিকৃত করে শাস্ত্রজ্ঞানহীন সনাতনীদের কাছে তুলে ধরে দাবী করে যে, শিব নাকি নিজের পুরুষাঙ্গ ধরে ঋষি পত্নীদের দেখিয়ে দেখিয়ে অসভ্যতামী করছিল। আসলে এই কদর্য আর্যসমাজীদের দয়ানন্দ সরস্বতীও যেমন নন্নীজান রমাবাই প্রেমিক তথা নারীলোলুপ ছিল, ঠিক তেমনি সেই দয়ানন্দ সরস্বতীর শিষ্যদের চোখের দৃষ্টিতেও সব জায়গায় অশ্লীলতাই ধরা পড়ে। আর ম্লেচ্ছ যবনদের কথা তো বলাই বাহুল্য কেননা তাদের তো শিক্ষাই দেওয়া হয় স্ত্রীজাতীকে ভোগ করবার।
যাই হোক এবার এই হস্তে লিঙ্গ ধারণের বিষয়টা পরিষ্কার করে দিই, শিবমহাপুরাণে - হাতে শিবলিঙ্গ রেখে পূজা করবার নির্দেশ রয়েছে। যারা শৈব বৈদিক সাধু সন্ন্যাসী হন তারা সকলেই হাতে শিবলিঙ্গ রেখে পূজা করেন এবং সর্বদা তারা তাদের সাথে একটি শিবলিঙ্গ রাখেন, যারা অবৈদিক-দিগম্বর সাধু হন তারা হাতে শিবলিঙ্গ নিয়েই বিচরন করেন বিভিন্ন স্থানে, তাই তাদের লিঙ্গধারণকারী বলে। তারা নিজেরাও ভস্ম ধারণ করেন সর্বাঙ্গে আবার শিবলিঙ্গকেও ভস্ম দিয়ে পূজা করেন, শব্দ প্রমাণ দেখুন 👇
করপূজানিবৃত্তানাং স্বভোজ্যং তু নিবেদয়েতৎ ।
নিবৃত্তানাং পরং সূক্ষ্মং লিঙ্গমেব বিশিষ্যতে ॥৩৫
বিভূত্যভ্যর্চনং কুর্যাদ্বিভূতিং নিবেদয়েৎ ।
পূজাং কৃত্বা তথা লিঙ্গং শিরসা ধারয়েৎসদা ॥৩৬
সরলার্থ : নিবৃত্তিমার্গী উপাসকদের জন্য হাতে শিবলিঙ্গ পূজার বিধান রয়েছে। তার (ভিক্ষা আদি থেকে প্রাপ্ত) নিজের ভোজনকেই নৈবেদ্য রূপে অর্পিত করা উচিত। (দুইধরনের বৈদিক ও অবৈদিক) নিবৃত্তিমার্গীদের জন্য সূক্ষ্ম লিঙ্গকেই শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে। তাদের উচিত বিভূতি অর্থাৎ ভস্ম দ্বারা পূজা করা এবং বিভূতিকেই নৈবেদ্য রূপে শিবকে প্রদান করা। পূজা করার পর সেই বিভূতিস্বরূপযুক্ত শিবলিঙ্গ কে মাথার ওপর সর্বদা ধারণ করা উচিত। ৩৫-৩৬
নিচের ছবিগুলিতে দেখুন বাণলিঙ্গ হাতে ধারণ করে পূজা করা হয় কি না ?
(কাশী জঙ্গমবাড়ী মঠে শৈব শ্রৌত(বৈদিকমার্গী) বীরশৈব পরম্পরার জগৎগুরু শ্রীচন্দ্রশেখরগাড়ু জী হাতের উপর লিঙ্গ ধারণ করে তার অভিষেক করছেন - চিত্র নং ৩)
👆উপরোক্ত শ্লোক থেকে পরিষ্কার হল যে ভগবান শঙ্কর পরীক্ষা নেবার জন্য যে সর্বত্যাগী বৈরাগীরূপ ধারণ করেছিলেন সেখানে তিনি নিজ হস্তে একটি শিবলিঙ্গ (বাণলিঙ্গ) ধারণ করে ছিলেন, কোনো পুরুষাঙ্গ ধরে ছিলেন না। তা নাহলে শিবলিঙ্গ যদি পুরুষাঙ্গ ই হতো তাহলে সেই পুরুষাঙ্গ মাথায় তোলা কোনো ভাবে কি সম্ভব ?
কেননা ৩৬নং শ্লোকে বলছে লিঙ্গং শিরসা ধারয়েৎসদা অর্থাৎ পূজার পর উক্ত লিঙ্গ নিজের মাথার উপরে ধারণ করতে।
দয়ানন্দীদের কাছে সম্ভব হতে পারে হয়তো, কেননা তারা তো পুরাণের অর্থ বেশি বেশি বোধগম্য করে ফেলেছে 😄
(7) বিচিত্র লীলা করতে লাগলেন - এই শব্দগুলিকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মশলা মাখিয়ে অপসংস্কৃতির ভাইরাসরা দাবী করে যে এর অর্থ হল - অশ্লীল ইশারা করছিলেন শিব।
সত্যি কথা বলতে যাদের যেমন ভাব তাদের তেমন লাভ। পরমেশ্বর শিব এই যে ছদ্মবেশীরূপ ধারণ করে হাতে শিবলিঙ্গ ধারণ করে দারুবনে উপস্থিত হয়েছেন, একেই বলা হয়েছে পরমেশ্বরের বিচিত্র লীলা। অথচ কদর্য ভাইরাসদের মস্তিষ্কে নোংরা দৃশ্যের ভাবভঙ্গির কাল্পনিক গল্প ঠাওর হয়েছে এই শব্দ দ্বারা, যেটা কদর্য ভাইরাসদের নিজেদেরই স্বভাব।
যাই হোক এতপর্যন্ত বিশ্লেষণ সম্পন্ন। এবার পরবর্তী শ্লোকগুলি দেখা যাক।
মনসা চ প্রিয়ং তেষাং কর্তূম বৈ বনবাসিনাম্ ।
আগাম তদ্বনং প্রিত্যা ভক্তপ্রীতো হলঃ স্বয়ম্ ॥১১
রং দৃষ্ট্বা ঋষিপত্ন্যস্তাঃ পরং এাসমুপাগতাঃ ।
বিহ্বলা বিস্মিতাশ্চান্যাঃ সমাজগ্মূস্তথা পুনঃ ॥১২
আলিলিঙ্গুস্তথা চান্যাঃ করং ধৃত্বা তথাপরাঃ ।
পরস্পরম তু সংঘর্ষাত্সংমগ্নাস্তাঃ স্ত্রিয়স্তদা ॥১৩
সরলার্থ :
মনে মনে সেই বনবাসিদের কল্যাণ হেতু¹, ভক্ত বৎসল শিব স্বয়ং প্রেমপূর্বক সেই বনে গেলেন। ওনাকে দেখে ঋষিপত্নীরা অত্যন্ত ভয়ভিত হয়ে² যায় আর অন্য স্ত্রীগণ আশ্চর্যচকিত হয়ে সেখানে চলে আসে। কিছু স্ত্রী পরস্পর হাত ধরে আলিঙ্গন করতে থাকে³,আর কিছু স্ত্রী নিজেদের মধ্যে আলিঙ্গন করার সময় সংঘর্ষের ফলে অত্যন্ত মোহবিহ্বল⁴ হয়ে পরে ॥১১-১৩
[বিশ্লেষণ : (1) বনবাসীদের কল্যাণ হেতু - এই শব্দের দ্বারা কি বোঝাচ্ছে ? পরমেশ্বর এখানে পরীক্ষা নিতে এলেন এটা সবার আগেই বলা হয়েছে, আর পরীক্ষাটা এই কারণেই তিনি নিতে এসেছেন কারণ তিনি চান এই পরীক্ষার মাধ্যমে বনবাসীর কল্যান হোক। কিন্তু অপসংস্কৃতির ভাইরাসরা এই ছোট ছোক শব্দগুলিকে কাটছাট করে সরিয়ে অর্ধসত্য লিখে সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরে, যেটা তাদের পুরোনো স্বভাব।
(2) ওনাকে দেখে ঋষিপত্নীরা অত্যন্ত ভয়ভীত হন - দেখুন এখানে পরিষ্কার করে বলা হচ্ছে যে, দিগম্বর ভস্মলিপ্ত বিকট ভয়ঙ্কর ছদ্মবেশধারী শিবকে দেখে ঋষিপত্নীরা খুবই ভয় পেয়েছিলেন। আর এটা স্বাভাবিক বিষয়, কেননা - কোন একজন বস্ত্রহীন ভস্মে আপাদমস্তক লিপ্ত থাকা অস্বাভাবিক রূপধারণকারী গৃহত্যাগী ব্যক্তিকে নিজের সম্মুখে উপস্থিত দেখলে যে কোন নারী উৎকণ্ঠা বোধ করবে ইহাই স্বাভাবিক। তার উপর যারা সংসারী তাদের কাছে বস্ত্রহীন অবস্থায় কোনো ব্যক্তি সর্বদাই নিন্দিত হয়, আর যখন এমন একজন ব্যক্তি ঋষিপত্নীদের গৃহে উপস্থিত হয় যেসময়ে সেই গৃহে পুরুষ মানুষ উপস্থিত নেই , তখন সেই মুহূর্তে নারীদের উৎকণ্ঠা বোধ হবে এটা অস্বাভাবিক হতেই পারেনা। সুতরাং এখানে ভয়ভীত বলে উল্লেখ করা হয়েছে, কামমোহিত বলা হয়নি, কেননা একজন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণকারী ব্যক্তিকে দেখে সতীসাধ্বী ঋষিপত্নীরা কিভাবে কামমোহিত হবেন ?
(দয়ানন্দীদের কাছে অবশ্য হতেও পারেন, কেননা যাদের মহর্ষি দয়ানন্দ সন্ন্যাসী হবার পরেও যৌনশক্তিবৃদ্ধিকারী বড়ি সেবন করতে পারে, তাদের দৃষ্টিতে এটা হওয়া অস্বাভাবিক নয়, আর ম্লেচ্ছ যবনরা তো দিদি বোন কাকি জেঠি কাউকে বাদ দেয় না)
(3) অন্য স্ত্রীগণ আশ্চর্যচকিত হয়ে সেখানে চলে আসে। কিছু স্ত্রী পরস্পর হাত ধরে আলিঙ্গন করতে থাকে - এইখানে এবার বিশেষ করে এখানে লক্ষ্য করবার বিষয় রয়েছে , এখানে বলা হচ্ছে ঋষিগণের পত্নিদের বাদ দিয়ে অনান্য স্ত্রীগণ সেখানে চলে আসেন, অর্থাৎ এখানে ঐ বনে বসবাস কারী অনান্য মহিলাদের উপস্থিত হবার কথা বলা হয়েছে। তারপর তারা পরস্পর হাত ধরে আলিঙ্গন অর্থাৎ জড়িয়ে ধরে, এখানে অপসংস্কৃতির ভাইরাসরা "কিছু স্ত্রী পরস্পর হাত ধরে আলিঙ্গন করতে থাকে" - এই শব্দের অর্থের দৃষ্টিকোণ নিজেদের মস্তিষ্কে চলা জঘন্য ইঙ্গিত কে আরোপিত করে অর্থের অনর্থ ঘটিয়ে সেটাকে তুলে ধরে বলতে চায় যে সেখানে স্ত্রীগণেরা কামনার বশে জড়াজড়ি করতে শুরু করেছিল।
যদি দৃষ্টিকোণ টা একটু স্বাভাবিক রাখতো তাহলে এই অপসংস্কৃতির ভাইরাসরা বোধগম্য করতে পারতো যে, স্বভাবতই কোমলস্বভাবের হবার দরুণ নারীরা অত্যন্ত ভয়ভীত হলে পরস্পর পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে, একটু চোখ বন্ধ করে ভাবুন এটা কি চিরাচরিত সত্য নয় ?
কিন্তু অপসংস্কৃতির ভাইরাসরা এখানেও স্ত্রীদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি কামনা ভাবকে দর্শানোর অপপ্রয়াস করে চলেছে মাত্র। আবার কখনো কখনো এরা বলতে চায় যে ঐ স্ত্রীগণেরা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণকারী শিবের সাথে আলিঙ্গন করতে শুরু করেছিল। ভাবুন এরা কতটা নীচু মানসিকতা সম্পন্ন । কারণ এদের উদ্দেশ্যেই হল যেমন তেমন ভাবে হোক পুরাণ শাস্ত্রের নামে নোংরা তথ্য রটিয়ে নিজেদের দল ভারী করা।
(৪) কিছু স্ত্রী নিজেদের মধ্যে আলিঙ্গন করার সময় সংঘর্ষের ফলে অত্যন্ত মোহবিহ্বল হয়ে পড়ে - এখানে বলা হচ্ছে যারা পরস্পর পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে ছিল ভয়বশত তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক নারীরা অত্যন্ত ভয়ভীত হয়ে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরতে গিয়ে সংঘর্ষ হয়ে মোহবিহ্বল অর্থাৎ একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা লেগে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন ।
অথচ অপসংস্কৃতির ভাইরাসরা এখানেও নন্নীজানপ্রেমিক দয়ানন্দের স্বভাবকে দর্শন করে ফেলেছেন, ম্লেচ্ছ যবনদের চোখে তো সব জায়গাতেই যৌনতা ধরা পড়ে।
এবার পরবর্তী শ্লোকগুলি দেখা যাক।
এতস্মিন্নেব সময়ে ঋষিবর্যাঃ সমাগমন্।
বিরুদ্ধং রং চ তে দৃষ্ট্বা দুঃখিতাঃ ক্রোধমূর্ছিতাঃ ॥১৪
তথা দুঃখমনুপ্রাপ্তাঃ কোহ্য়ং কোহ্য়ং তথাব্রুবন্।
সমস্তা ঋষয়স্তে বৈ শিবমায়াবিমোহিতাঃ ॥১৫
সরলার্থ :
এমন সময় সব ঋষিগণ বন থেকে ফিরে আসে আর এই আশ্চর্য আচরণ দেখে তারা দুঃখিত ও ক্রোধে ব্যাকুল হয়ে ওঠে¹।
তখন শিবের মায়ায় মোহিত² সমস্ত ঋষিগণ দুঃখিত হয়ে নিজেদের মধ্যে বলতে থাকে - " কে এ? কে এ?" ³॥১৪-১৫
[বিশ্লেষণ : (1) তারা দুঃখিত ও ক্রোধে ব্যাকুল হয়ে ওঠে - এটি হবার কারণ হল , একজন বস্ত্রহীন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণকারী অচেনা ব্যক্তিকে গৃহে উপস্থিত দেখে তারা প্রথমেই ভেবেছেন যে গৃহে শুধুমাত্র স্ত্রীলোক বিদ্যমান, এহেন আচারহীন ব্যক্তির আগমনে তাদের গৃহে থাকা স্ত্রীগণ আতঙ্কে ভুগছে। এই দৃশ্য দেখে তারা হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে গেলেন।
(2) শিবের মায়ায় মোহিত - কোনো লীলা ঘটানোর জন্য পরমেশ্বর মায়ার প্রকাশ করেন, যার ফলে ব্যক্তি তার নিজের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যান, আর এমন কিছু করে বসেন যা তার অভিপ্রায় থাকে না। প্রথমেই ক্রোধ সংবরণ না করার কারণেই তারা শিবমায়ার কবলে পড়েন। সুতরাং মায়ায় পড়ে বড় অনর্থও ঘটতে পারে, এখান থেকেই আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত, সর্বদা ইন্দ্রিয়কে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত, নয়তো অনর্থ ঘটে।
(3) নিজেদের মধ্যে বলতে থাকেন - " কে এ? কে এ? - এখান থেকে বোঝা যাচ্ছে যে দিগম্বর ভস্মলিপ্ত ছদ্মবেশীরূপধারী যে আসলে শিব, তা ঋষিগণ বুঝতেই সক্ষম হননি। তারা ক্রোধের বশে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলেন। তাই তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগলেন এবং ঐ দিগম্বর ভস্মলিপ্ত ব্যক্তিকেই জিজ্ঞেস করতে লাগলেন যে তিনি কে ? ]
যদা চ নোক্তবান্ কীঞ্চিত্সোহবধূতো দিগম্বরঃ ।
উচুস্তং পুরুষং ভীমং তথা তে পরমর্ষয়ঃ ॥১৬
ত্বয়া বিরুদ্ধং ক্রিয়তে বেদমার্গবিলোপি য়ৎ ।
ততস্ত্বদীয়ং তল্লিঙ্গম পততাম পৃথিবীতলে ॥১৭
সরলার্থ :
যখন সেই দিগম্বর অবধূত কিছুই বললো না, তখন ভয়ঙ্কর পুরুষের রূপধারী শিবের উদ্দেশে মহর্ষিগণ বললেন - হে অবধূত! তুমি বেদমার্গের বিরুদ্ধ আচরণ করেছো। তাই তোমার ওই বিগ্রহরূপ লিঙ্গ শীঘ্রই পৃথিবীতে পতিত হোক¹ ॥১৬-১৭
[বিশ্লেষণ : (1) অবধূত! তুমি বেদমার্গের বিরুদ্ধ আচরণ করেছো । তাই তোমার ওই বিগ্রহরূপ লিঙ্গ শীঘ্রই পৃথিবীতে পতিত হোক - এটি বলার তাৎপর্যটি খুবই সরল, ঋষিগণ তাদের গৃহে উপস্থিত বস্ত্রহীন ভস্মধারী ব্যক্তির হাতে শিবলিঙ্গ(বানলিঙ্গ) দেখে তারা ভেবেছেন যে, ঐ অবধূত অর্থাৎ সর্বসংস্কারত্যাগী ব্যক্তিটি বেদমার্গের বিপরীত আচরণ করেছেন, কেননা, বেদমার্গ কখনোই বস্ত্রহীন যোগী হতে নির্দেশ দেয় না। সুতরাং, অবৈদিক ব্যক্তির হাতে শিবলিঙ্গ দেখে তারা রুষ্ট হন এবং সেই শিবলিঙ্গকে ধরনীতে পতিত হয়ে অবস্থিত হোক এই নির্দেশ দেন।
এখানে কয়েকটি বিষয় মনে রাখতে হবে, ঋষিগণ তার গৃহে আসা ব্যক্তির সম্পর্কে না জেনেই তার উপর রুষ্ট হয়েছেন অর্থাৎ তারা সঠিক ভাবে বিচার বিবেচনা না করেই গৃহে উপস্থিত হওয়া অতিথির সেবা করেননি, বরং তাকে বেদ বিরুদ্ধ আচরণকারী বলে অমর্যাদা করেছেন। তারা ভুলে গিয়েছিলেন যে, বাহ্যিক দেহের সাথে আত্মার সম্পর্ক নেই, আত্মা নির্লিপ্ত। ঋষিগণ কতটা জিতেন্দ্রিয় অর্থাৎ তারা নিজেদের ইন্দ্রিয়কে কতটা বশ করতে সক্ষম হয়েছেন সেটাই এখানে পরমেশ্বর শিব ছদ্মবেশে পরীক্ষা করতে উপস্থিত হয়েছিলেন।
ঋষিগণ অবৈদিক বলে সাধুকে অপমান করার পর তার হাত থেকে বানলিঙ্গ পতিত করার নির্দেশ দিলে পরমেশ্বর তার পতিত হওয়া বানলিঙ্গ দ্বারা লীলা প্রকাশ করতে শুরু করলেন , চলুন পরবর্তী শ্লোকে সেই বিষয়ের শ্লোক গুলো দেখি....
।।সূত উবাচ।।
ইত্যুক্তে তু তথা তৈশ্চ লিঙ্গম চ পতিতম ক্ষণাৎ ।
অবধূতস্য তস্যাশু শিবস্যাদ্ভুতরূপিণঃ ॥১৮
সরলার্থ :
।।সূত উবাচ।।
হে মহর্ষিগণ! ওনাদের এরূপ বলার পর অবধূতবেশধারী শিবের সেই (বান) লিঙ্গ¹ শীঘ্রই পৃথিবীতে পতিত হয় ॥১৮
[বিশ্লেষণ : (1) অবধূতবেশধারী শিবের সেই (বান) লিঙ্গ - এই শব্দটির দ্বারা বোঝানো হয়েছে যে পরমেশ্বর শিব যখন ছদ্মবেশে ধারণ করেছিলেন, তখন তিনি তার করতলপৃষ্ঠে অর্থাৎ হাতের উপর একটি শিবলিঙ্গ অর্থাৎ বানলিঙ্গ ধরে রেখেছিলেন, ঋষিগণের কথায় সেই বানলিঙ্গ তখনই হাত থেকে স্খলিত হয়ে পৃথিবীতে অর্থাৎ মাটিতে পড়ে যায়। এখানে অশ্লীলতার কাল্পনিক দৃষ্টিভঙ্গি ধরানোর আস্পর্ধা দেখায় অসনাতনী ম্লেচ্ছ যবনেরা।
তল্লিঙ্গম চাগ্নিবৎ সর্বংযদ্দদাহ পুরা স্থিতম্ ।
যত্র তত্র চ তদ্ধাতি তত্র তত্র দহেত্পুনঃ ॥১৯
পাতালে চ খতম তচ্চ স্বর্গে চাপি তথৈবচ চ ।
ভুমৌ সর্বত্র তদ্ধাতম না কুত্রাপি স্থিরং হি তত্ ॥২০
সরলার্থ :
সেই বাণলিঙ্গ অগ্নিস্বরূপ ধারণ করে সামনে যা পেলো তাই দহন করতে লাগল¹, শুধু তাই নয়, তা ছড়িয়ে পড়লো এবং সেই অগ্নি যেখানেই গেলো সব ভস্মীভূত করে দিলো²। তা পাতালে এবং স্বর্গেও গেলো এমনকি পৃথিবীতেও সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে লাগলো, কিন্তু কোথাও সেই অগ্নি স্থির হলো না³ ॥১৯-২০
[বিশ্লেষণ : (1) বাণলিঙ্গ অগ্নিস্বরূপ ধারণ করে সামনে যা পেলো তাই দহন করতে লাগল - এর দ্বারা পরিষ্কার করে বোঝাই যাচ্ছে যে ছদ্মরূপ ধারণকারী প্রভু শিবের হাত থেকে বাণলিঙ্গ পতিত হয়ে মাটিতে পড়েই ঋষিগণকে শিক্ষা দেবার জন্যই শিবের ইচ্ছেয় অগ্নিরূপ ধারণ করে সেখানে অগ্নি দ্বারা সবকিছু দগ্ধ করতে শুরু করেছিল। এমনি সেই আগুন ছড়িয়ে পড়লো চারিদিকে।
(2) সেই অগ্নি যেখানেই গেলো সব ভস্মীভূত করে দিলো - এই শ্লোকের তাৎপর্য হল পারমার্থিক, শিবের মধ্যে সমগ্র জগৎ লয় হয় তাই তাকে লিঙ্গ বলে, শিবমহাপুরাণে পরমেশ্বর শিবের লিঙ্গ কথার অর্থ এইভাবে বলা হয়েছে,
লিঙ্গবেদির্মহাদেবী লিঙ্গং সাক্ষান্মহেশ্বরঃ ।
লয়নাল্লিঙ্গমিত্যুক্তং তত্রৈব নিখিলং জগৎ ॥৩৮
[তথ্যসূত্র - শিবমহাপুরাণ/রুদ্রসংহিতা/সৃষ্টিখণ্ড/অধ্যায় নং ১০]
সরলার্থ - শিবলিঙ্গের যেটি বেদি অর্থাৎ অর্ঘা, তা মহাদেবী পার্বতীর স্বরূপ এবং লিঙ্গ সাক্ষাৎ মহেশ্বর। লয়ের অধিষ্ঠান হওয়ায় পরমেশ্বর শিবকে লিঙ্গ বলা হয়, কারণ এর মধ্যেই নিখিল জগৎ লয় হয় ॥৩৮
উপরোক্ত শব্দপ্রমাণের সহিত প্রমানিত হল যে,
• লিঙ্গ বলতে সরাসরি সেটিই পরমেশ্বর শিব বলেই বোঝানো হয়েছে, শিবের পুরুষাঙ্গকে বোঝানো হয়নি, আর মহেশ্বর লিঙ্গ -এর বেদি হল পার্বতী নিজেই।
• সমগ্র জগত শিবেই বিলীন হয়ে যায়, অর্থাৎ মায়া দিয়ে তৈরি এই অঙ্গরূপী জগত শিবে লয় হয় তাই "লয়+অঙ্গ = লিঙ্গ" বলা হয়েছে। শিবেই সমগ্র জগত লয় হয় তাই সাক্ষাৎ শিবকেই লিঙ্গ বলে অভিহিত করা হয়েছে, শিবের পুরুষাঙ্গকে নয়।
• শিব যেমন সাকার তেমনি তিনি নিরাকার, তাই মহাপ্রলয়ের সময় তিনি সমগ্র জগৎকে নিজের অন্তরেই বিলীন করে নিরাকার স্বরূপে একাই থাকেই, তাই শিবলিঙ্গ বলতে সেই নিষ্কল নিরাকার শিবকে বোঝানো হয়। এটি পারমার্থিক অবস্থা।
• সমগ্র জগতকে সংহার করে সেটি ভস্মরূপে নিজের অন্তরদেহেই বিলীন করেন বলে শিবকে ভস্মধারী বলা হয়। দেখুন শব্দপ্রমাণ 👇
তথা প্রপঞ্চকর্তাপি স শিবঃ পরমেশ্বরঃ ।
স্বাধিষ্ঠেয়প্রপঞ্চস্য দগ্ধ্বা সারং গৃহীতবান্ ॥৬৯
দগ্ধ্বা প্রপঞ্চং তদ্ভস্ম স্বাত্মন্যারোপয়য়েচ্ছিবঃ ।
উদ্ধূলনস্য ব্যাজেন জগৎসারং গৃহীতবান্ ॥৭০
[তথ্যসূত্র - শিবমহাপুরাণ/বিদ্যেশ্বরসংহিতা/অধ্যায় ১৮]
সরলার্থ - তেমনই প্রপঞ্চকর্তা শিবও নিজের আধেয়রূপে বিদ্যমান প্রপঞ্চকে ভস্ম করে, ভস্মরূপে তার সার তত্ত্ব গ্রহণ করেছেন। প্রোপঞ্চ দগ্ধ করে শিব সেই ভস্ম নিজ শরীরে লাগিয়েছেন। ভস্ম কে নিজের শরীরের লেপন করে তত্ত্বতঃ জগতের সারকে গ্রহণ করে নিয়েছেন ॥৬৯-৭০
উপরোক্ত দারুবনের কথনের শ্লোকের অর্থের ভাবার্থ হল - শিবলিঙ্গ মাটিতে পড়ার সাথে সাথেই অগ্নিরূপ ধারণ করে আশে পাশের সমস্ত কিছুকেই জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভস্ম করতে করতে নিজের ভেতরে সমাহিত করতে শুরু করেছিল অর্থাৎ শিবলিঙ্গ নিখিল জগতের লয় করতে শুরু করেছিল, যা ছিল সৃষ্টির বিপরীত অর্থাৎ সংহারমুখী ।
(3) কোথাও সেই অগ্নি স্থির হলো না - শিবলিঙ্গ হতে প্রকটিত সেই অগ্নি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল, কোনো স্থান সেই সংহারের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছিল না, সংহার হওয়া শুরু হয়েছে এবং তা ক্রমে ক্রমে সবকিছু দগ্ধ করে ভস্মরূপে নিজের ভেতরে বিলীন করতে শুরু করেছিল।]
লোকাশ্চ ব্যাকুলা জাতা ঋষয়স্তেহতিদুঃখিতাঃ।
ন শর্ম লেভিরে কেচিদ্দেবাশ্চ ঋষয়স্তথা ॥২১
সরলার্থ - ত্রিলোক ব্যাকুল হয়ে উঠলো আর সেই ঋষিগণ অত্যন্ত দুঃখিত হলেন। দেবতা ও ঋষিদেরও নিজেদের কল্যাণ চোখে পড়লো না ॥২১
ন জ্ঞ্যাতস্তু শিবো যৈস্তু তে সর্বে চ সুরর্ষয়ঃ।
দুঃখিতা মিলিতাঃ শীঘ্রং ব্রহ্মাণং শরণং যয়ু ॥২২
তত্র গত্বা চ তে সর্বে নত্বা স্তুত্বা বিধিম দ্বিজাঃ ।
তত্সর্বমবদন্ বৃওং ব্রহ্মণে সৃষ্টিকারিণে ॥২৩
সরলার্থ - যেই দেবতা ও ঋষিগণ শিব কে চিনতে পারলো না, তারা দুঃখিত হয়ে একসাথে ব্রহ্মার শরণে গেলেন। হে ব্রাহ্মণগণ! ওখানে গিয়ে তারা সবাই সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার স্তুতি করে তাকে সব জানান।।২২-২৩
ব্রহ্মা তদ্বচনম শ্রুত্বা শিবমায়াবিমোহিতান্ ।
জ্ঞাত্বা তান্ শঙ্করং নত্বা প্রোবাচ ঋষিসত্তমান্ ॥২৪
সরলার্থ : তখন ব্রহ্মা তাদের কথা শুনে, জানতে পারলেন যে সেই শ্রেষ্ঠ ঋষিগণ শিবের মায়ায় মোহিত হয়েছে¹, এবং তিনি সদাশিবকে নমস্কার করতে লাগলেন।।২৪
[বিশ্লেষণ : (1) শ্রেষ্ঠ ঋষিগণ শিবের মায়ায় মোহিত হয়েছে - এখানেই পরিষ্কার হয়ে গেল যে, ঋষিগণ শিবের মায়াতে আচ্ছন্ন হয়ে রুষ্ট হন ও হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে সরাসরি অবৈদিক বলে সাধু অতিথিকে অপমানিত করেন এমনকি তার হাতে থাকা বাণলিঙ্গটিকেও চ্যুত করার দুঃসাহস করেন।
॥ ব্রহ্মোবাচ ॥
জ্ঞাতারশ্চ ভবন্তো বৈ কুর্বতে গর্হিতম দ্বিজাঃ ।
অজ্ঞাতারো য়দা কুর্যুঃ কিং পুনঃ কথ্যতে পুনঃ ॥২৫
সরলার্থ :
।।ব্রহ্মা উবাচ।।
হে ব্রাহ্মণগণ! আপনারা জ্ঞানী হয়েও এই নিন্দিত কর্ম করছেন¹ ,তাহলে অজ্ঞানী ব্যক্তিরা এরকম করলে কি বলা যায় ॥২৫
[বিশ্লেষণ : (1) আপনারা জ্ঞানী হয়েও এই নিন্দিত কর্ম করছেন - এখানে পরিষ্কার করেই বলা হচ্ছে যে ঋষিগণ নিন্দিত কর্ম করেছেন, তাই এই প্রলয় অবস্থা আরম্ভ হয়েছে। তারা জ্ঞানী হয়েও অজ্ঞান বশত এমন কিছু কাজ করেছেন যে তাদের জন্য দুঃখজনক পরিস্থিতি উৎপন্ন হয়েছে। চলুন দেখা যাক ঋষি কর্তৃক সেই নিন্দিত কর্ম টি কি ?? !
বিরুদ্ধ্যৈবং শিবম দেবম কুশলং কঃ সমীহতে ।
মধ্যাহ্নসময়ে য়ো বৈ নাতিথিং চ পরামৃশেত্ ॥২৬
তস্যৈব সুকৃতং নীত্বা স্বীয়ং চ দুষ্কৃতম পুনঃ ।
সংস্থাপ্য চাতিথির্যাতি কিং পুনঃ শিবমেব বা¹ ॥২৭
সরলার্থ : এইভাবে সদাশিবের বিরোধিতা করে কেউ কি কল্যাণের কামনা করতে পারে! ? যদি মধ্যাহ্নে আগত অতিথিকে সৎকার না করা হয়, তাহলে অতিথি ব্যক্তির সব পূণ্য হরণ করে আর বদলে তার সব পাপ তাকে দিয়ে যায়; সেখানে শিবের বিষয়ে আর কি বলা ! ¹ ২৬-২৭।।
[বিশ্লেষণ : (1) যদি মধ্যাহ্নে আগত অতিথিকে সৎকার না করা হয়, তাহলে অতিথি ব্যক্তির সব পূণ্য হরণ করে আর বদলে তার সব পাপ তাকে দিয়ে যায়; সেখানে শিবের বিষয়ে আর কি বলা ! -উপরোক্ত শ্লোকের থেকে আমাদের যুক্তি ও ব্যাখ্যা শব্দ প্রমাণ সহ প্রমাণিত হয়ে গেল, আমরা প্রথমেই বলেছিলাম যে গৃহে উপস্থিত অতিথিকে দেখার পরেও ঋষিগণ তাকে অতিথি হিসেবে সৎকার না করেই নিন্দা করা শুরু করেছিল, তারা বিনয়ী হয়ে সেই ব্যক্তির পরিচয় জানতে চান নি বরং নিজেদের মধ্যে ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে এ কে ? এ কে ? বলেই সরাসরি অপমানিত করেছিল, সেই কারণে ব্রহ্মা সেই ঋষিগণকে বললেন যে, দুপুরে গৃহে উপস্থিত হওয়া অতিথির সেবা না করলে পাপ হয়, আর যখন সাক্ষাৎ শিবই অতিথি রূপ ধারণ করে এসেছেন তখন পাপের পরিমাণ যে কতখানি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না, শিবমহাপুরাণ এই বিষয়ে বলছে, অতিথি চাবমন্যন্তে কালে প্রাপ্তে গৃহাশ্রমে । তস্মাৎ তে দুষ্কৃতং প্রাপ্য গচ্ছন্তি নিরয়েঽশুচৌ ॥৩২
[তথ্যসূত্র - শিবমহাপুরাণ/উমা সংহিতা/অধ্যায় ১০]
অর্থ - আহারের সময় আগত অতিথির অনাদর করে, তারা এই পাপের ফলে নরকে পতিত হয় ॥৩২
সুতরাং ব্রহ্মাজী যা বলেছেন তা শিবমহাপুরাণেরই বচন। তাই অতিথি সৎকার না করে ঋষিগণ নিজেদের জন্য অকল্যাণকারী মুহূর্ত ডেকে এনেছেন।]
যাবল্লিঙ্গম স্থিরং নৈব জগতাং ত্রিতয়ে শুভম্ ।
জায়তে ন তদা ক্বাপি সত্যমেতদ্বদাম্যহম্ ॥২৮
ভবদ্ভিশ্চ তথা কার্যং যথা স্বাস্থ্যং ভবেদিহ ।
শিবলিঙ্গস্য ঋষয়ো মনসা সংবিচার্যতাম্ ॥২৯
সরলার্থ :
অতএব যতক্ষণ এই শৈব লিঙ্গ স্থির না হচ্ছে ততক্ষণ ত্রিলোকে কারো কল্যাণ সম্ভব নয়¹, আর এটাই সত্য। হে ঋষিগণ! এবার আপনারাই ভেবেচিন্তে সেই শিবলিঙ্গ স্থির করার উপায় করুন ॥২৮-২৯ ॥
[বিশ্লেষণ : (1) যতক্ষণ এই শৈব লিঙ্গ স্থির না হচ্ছে ততক্ষণ ত্রিলোকে কারো কল্যাণ সম্ভব নয় - এর দ্বারা বোঝা যাচ্ছে সংহার করতে উদ্যত শিবলিঙ্গ থেকে উদ্ভূত অশান্ত অগ্নি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে ক্রমশ সব কিছু নিজের অন্তরে ভস্মরূপে বিলীন করে নেবে যদি সেই অগ্নি শান্ত না হয়।
॥ সূত উবাচ ॥
ইত্যুক্তাস্তে প্রণম্যোচুরব্রহ্মাণমৃষয়শ্চ বৈ ।
কিমস্মাভির্বিধে কার্যং তৎকার্যং ত্বং সমাদিশ ॥৩০
ইত্যুক্তশ্চ মুনীশৈস্তৈঃ সর্বলোকপিতামহঃ।
মুনীশাংস্তাংস্তদা ব্রহ্মা স্বয়ং প্রোবাচ বৈ তদা ॥৩১
সরলার্থ :
।।সূত উবাচ।।
ব্রহ্মার থেকে এই উত্তর পেয়ে মুনিগণ তার কাছে এর সমাধান চাইলো। মুনিদের কথা শুনে ব্রহ্মা বললেন ॥৩০-৩১
॥ ব্রহ্মোবাচ ॥
আরাধ্য গিরিজাং দেবীং প্রার্থয়ন্তু সুরাঃ শিবাম্ ।
যোনিরূপা ভবেচ্চেদ্বৈ তদা তৎস্থিরতাং ব্রজেৎ ॥৩২
সরলার্থ :
।।ব্রহ্মা উবাচ।।
হে মুনিগণ!হে দেবগণ! আপনারা দেবী পার্বতী রূপা শিবার আরাধনা করুন। তিনি যদি যোনিপিঠাত্মক রূপ ধারণ করে তাহলেই সেই শিবলিঙ্গ স্থির হয়ে যাবে¹।।৩২।।
[বিশ্লেষণ : (1)দেবী পার্বতীরূপা শিবার আরাধনা করুন। তিনি যদি যোনিপিঠাত্মক রূপ ধারণ করে তাহলেই সেই শিবলিঙ্গ স্থির হয়ে যাবে - উপরোক্ত আলোচনার মধ্যে বলা হয়েছে দেবী পার্বতী যদি যোনীপীঠাত্মকরূপ ধারণ করেন তবেই লিঙ্গের বিনাশকার্য স্থির হবে। কদর্য নামাজী ভাইরাসদের চোখে সর্বত্র সব সময় যৌনাঙ্গ দর্শন হয়, তারা এখানে যোনি বলতে স্ত্রীজননাঙ্গের গন্ধ পায়, এখানে সাক্ষাৎ দেবীকেই যোনীরূপ ধরতে বলা হয়েছে, শুধু দেবীর শরীরের নির্দিষ্ট একটি অঙ্গের অংশকে নয়। আর এখানে যোনী শব্দের অর্থ - সৃষ্টি/কারণ/উৎপত্তি।
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে "যোনী" বলতে কি বোঝায় দেখা যাক,
যো যোনিং যোনিমধিতিষ্ঠত্যেকো যস্মিন্নিদং সং চ বি চৈতি সর্বম্।
তং ঈশানং বরদং দেবমীড্যং নিচায্যেমাং শান্তিমত্যম্ভমেতি ৷৷১১
[তথ্যসূত্র : শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ/অধ্যায় নং ৪]
অন্বয় : যঃ একঃ (যে এক ও অদ্বিতীয় [ঈশ্বর]); যোনিং যোনিম্ (তিনিই উৎপত্তির প্রতিটি ক্ষেত্রে); অধিতিষ্ঠতি (অধিষ্ঠিত); যস্মিন্ (যাঁতে [ঈশ্বর, যিনি পালন করেন]); ইদম্ (এই [জগৎ-সংসার]); সম্-এতি (সম্পূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে আছে); বি-এতি (লয় হয়); তং বরদম্ (সেই ঈশ্বর, যিনি ভক্তদের বর দেন); ঈড্যম্ (পূজনীয়); দেবম্ (দেবতা [যিনি আলো দেন]); ঈশানম্ (শিবের পাঁচ মুখের মধ্যে একটি মুখের নাম ঈশান [যিনি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন]); নিচায্য (উপলব্ধি করে); অত্যন্তম্ (আত্যন্তিক বা শাশ্বত); শান্তিম্ (শান্তি); এতি (অর্জন করে)।
অর্থ: ঈশান(শিব) এক এবং অদ্বিতীয়। তিনিই সবকিছুর মূল। জগৎ উৎপত্তিরূপে প্রকাশিত হলে সেই জগৎকে তিনিই পালন করেন। আবার প্রলয়কালে জগৎ তাঁর কাছেই ফিরে যায়। তিনি সবকিছুর নিয়ন্তা। একমাত্র তিনিই ভক্তদের বর দেন। তিনিই একমাত্র আরাধ্য। এই ঈশ্বরের প্রত্যক্ষ অনুভূতি হলে শাশ্বত শাস্তি লাভ করা যায়।
আরো দেখা যাক,
যো যোনিং যোনিমধিতিষ্ঠত্যেকো বিশ্বানি রূপাণি যোনীশ্চ সর্বাঃ।
ঋষিং প্রসূতং কপিলং যত্তমগ্রে জ্ঞানৈর্বিভর্তি জায়মানং চ পশ্যেৎ॥২
[তথ্যসূত্র : শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ/অধ্যায় নং ৫]
অন্বয়: যঃ একঃ (যিনি অদ্বিতীয়); যোনিং যোনিম্ (তবুও তিনি সর্বত্র এবং সকলের মধ্যে আছেন); [তথা] বিশ্বানি রূপাণি (সব রূপ [রঙ] তাঁরই); সর্বাঃ যোনীঃ চ অধিতিষ্ঠতি (সব উৎপত্তিস্থানের তিনিই নিয়ন্তা); যঃ (যিনি); অগ্রে প্রসূতম্ (প্রথম জাত); তং ঋষিং কপিলম্ (পিঙ্গলবর্ণ, সর্বজ্ঞ হিরণ্যগর্ভকে); জ্ঞানৈঃ বিভর্তিঃ (জ্ঞান দিয়ে পূর্ণ করেন); জায়মানং চ পশ্যেৎ ([তিনি] হিরণ্যগর্ভকে জন্মাতেও দেখেছেন); [সেই পরমেশ্বর সকলের থেকে আলাদা]।
অর্থ : তিনি (পরমেশ্বর) অদ্বিতীয়, তবু তিনি সর্বব্যাপী এবং সকলের মধ্যে আছেন। প্রতিটি উৎপত্তিস্থানের তিনিই নিয়ন্তা। সৃষ্টির পূর্বে জাত যে হিরণ্যগর্ভ, তিনি সর্বজ্ঞ। কিন্তু তিনি (পরমেশ্বর শিব) হিরণ্যগর্ভকে জন্মাতেও দেখেছেন এবং তাঁকে জ্ঞান দিয়ে পূর্ণ করেছেন। এই পরমেশ্বর সকলের থেকে(গুণ থেকে) আলাদা(পরমার্থে)।
আরো দেখুন,
সর্বা দিশ ঊর্ধ্বমধশ্চ তির্যক্ প্রকাশয়ন্ ভ্ৰাজতে যখনবান্। এবং স দেবো ভগবান্ বরেণ্যো যোনিস্বভাবানধিতিষ্ঠত্যেকঃ ॥৪
[তথ্যসূত্র : শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ/অধ্যায় নং ৫]
অন্বয় : যৎ উ (যেমন); অনড্বান্ (সূর্য); ঊর্ধ্বম্ (উপরে); অধঃ (নীচে); তির্যক্ চ (এবং সকল পার্শ্বে); সর্বাঃ দিশঃ (সকল দিকে); প্রকাশয়ন্ (আলো দিয়ে); ভ্রাজতে (কিরণ দেন); এবং (ঠিক একইভাবে); ভগবান্ (সর্বশক্তিমান); সঃ (তিনি); বরেণ্যঃ (পূজ্য); একঃ দেবঃ (সেই এক ঈশ্বর); যোনিস্বভাবান্ (কারণরূপে); অধিতিষ্ঠতি (নিয়ন্ত্রণ করেন)।
অর্থ : সূর্য যেমন তাঁর আলো দশদিকে ছড়িয়ে দেন, তেমনি ভগবানও সবকিছুকে নিয়ন্ত্রণ করেন। কারণ তিনিই সবকিছুর একমাত্র কারণ। তিনিই একমাত্র সর্বশক্তিমান, সকলের পরমেশ্বর।
উপরোক্ত উপনিষদের বাক্য থেকে প্রমাণিত হয় যে, যোনীরূপ কথার অর্থ কারণাত্মক।
👉ব্রহ্মা সকল দেবতা ও ঋষিগণকে বলেছিলেন তারা যেন শিবের শক্তিরূপী শিবা অর্থাৎ পার্বতীদেবীকে সৃষ্টিমুখী বেদি ধারণ করতে বলেন যাতে লয়মুখী বাণলিঙ্গ সৃষ্টিমুখী বেদিতে অবস্থিত হয়ে লয় না করে বরং সৃষ্টিমুখী হয়ে শান্ত হয়, নিষ্কল নিরাকার লিঙ্গরূপী মহেশ্বরকে সকল সাকাররূপেই স্থিত রাখতে শক্তিররূপী বেদিতে ধারণ করেন, কারণ, শিবমহাপুরাণেই বলা হয়েছে - লিঙ্গবেদির্মহাদেবী
লিঙ্গের বেদি সাক্ষাৎ নিজেই দেবী, এই কারণে সকল শিবভক্ত পরমেশ্বর শিবের সাথে পার্বতী অর্থাৎ শক্তিকে একত্রে পূজা করেন ।
কদর্য নামাজী ভাইরাসদের মস্তিষ্কে শুধু নন্নীজান রমার সাথে করা গাজর্ষি দয়াভণ্ডের অশ্লীলতা সব স্থানেই দেখতে পারে, শিক্ষা যেমন চরিত্রও তেমন হবে এটাই স্বাভাবিক।
তদ্বিধিং প্রবদাম্যদ্ধ সর্বে শৃণূত সত্তমাঃ ।
তামেব কুরুত প্রেম্ণা প্রসন্না সা ভবিষ্যতি ॥৩৩
সরলার্থ : হে ঋষিসত্তমো! এবার আমি আপনাদের সেই উপায় বলছি, আপনারা প্রেমপূর্বক তা শ্রবণ করুন আর সেই বিধি সম্পাদন করুন।।৩৩।।
[বিশ্লেষণ : (1) বিধি সম্পাদন করুন - এখানে ভালোভাবেই বোঝা যাচ্ছে যে, হস্ত হতে মাটিতে পতিত হওয়া বাণলিঙ্গটি একস্থানে অবস্থিত থেকেই অগ্নিপ্রকট করে অনান্য স্থানে সেই অগ্নি ছড়িয়ে দিচ্ছিলো লীলাবশত। তা না হলে সেই লিঙ্গকে একস্থানে রেখে পূজা করা সম্ভব ছিল না, কিন্তু কদর্য নামাজী ভাইরাসদের মস্তিষ্কে শুধু একটার পর একটা অশ্লীল কাল্পনিক গল্পের উদয় হচ্ছিল, আর তারা দাবী করছে যে, "শিবলিঙ্গ কেটে পড়েই স্বর্গমর্ত্যপাতালে সমস্ত জায়গায় দৌড়ে গিয়ে তুলকালাম বাধিয়ে দিল" - এসব মনগড়া মুখস্থ করা গল্প শাস্ত্র সম্পর্কে অজ্ঞ সনাতনী শিবভক্তদের শুনিয়ে তার শিবভক্তিতে আঘাত করে সেই ব্যক্তিকে নিজেদের দলে টেনে দল ভারী করার অপপ্রয়াস করছে এই আর্যসমাজী অগ্নিবীর নামক ম্লেচ্ছ যবনের দল, যারা নিজেদের বৈদিক, আর্য বলে দাবি করে আর নিজেদের নোংরা মানসিকতায় পুষ্ট তাদের মনমতো অপযুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করা বেদ গীতা ছাপিয়ে মানুষের কাছে দেখাচ্ছে যেন তারা কতো বড় পণ্ডিত, কতো বড় সনাতন ধর্মের প্রচারক কিন্তু তলায় তলায় সনাতন ধর্মের প্রাচীন মহিমাযুক্ত পবিত্র শিব মাহাত্ম্য কে ছোট করে সনাতনীদের বিগ্রহপূজা বিরোধী, পুরাণনিন্দুক বানিয়ে তুলছে। এদের এসব যুক্তি অনান্য ম্লেচ্ছ যবন তথা নাস্তিকেরা হাতিয়ার বানিয়ে সাধারন সনাতনীদের আক্রমণ করছে বর্তমানে, তাই এদের সমস্ত অপযুক্তির সমস্ত তাসের ঘর শিবকৃপায় নস্যাৎ করতে আমরা বাধ্য হয়েছি।]
কুম্ভমেকং চ সংস্থাপ্য কৃত্বাষ্টদলমুত্তমম্।
দুর্বায়বাঙ্কুরৈস্তীর্থোদকমাপুরয়েত্ততঃ ॥৩৪
বেদমন্ত্রৈস্ততস্তং বৈ কুম্ভং চৈবাভিমন্ত্রয়েৎ ।
শ্রুত্যুক্তবিধিনা তস্য পুজাং কৃত্বা শিবং স্মরন্ ॥৩৫
তল্লিঙ্গম তজ্জলেনাভিষেচয়েত্পরমর্ষয়ঃ।
শতরুদ্রিয়মন্ত্রৈস্তু প্রোক্ষিতং শান্তিমাপ্নুয়াৎ ॥৩৬
সরলার্থ : অষ্টদলযুক্ত কমল তৈরি করে তার ওপর দূর্বা ও যুবঅঙ্কুর যুক্ত তীর্থের জলপূর্ণ কলশ স্থাপন করতে হবে। তারপর বেদোক্ত মন্ত্রের দ্বারা সেই কলশ কে অভিমন্ত্রিত করতে হবে। এরপর বৈদিক রীতির দ্বারা শিব কে স্মরণ করে সেই কলশের পূজা করতে হবে, এবং তারপর শতরুদ্রীয় মন্ত্রের দ্বারা সেই কলশের জল দিয়ে সেই শিবলিঙ্গের অভিষেক করতে হবে। তারপর একই মন্ত্রে শিবলিঙ্গ কে প্রোক্ষণ করতে হবে। তখনই সেই শিবলিঙ্গ শান্ত হবে¹।।৩৪-৩৬
[বিশ্লেষণ : (1) বৈদিক রীতির দ্বারা শিব কে স্মরণ করে সেই কলশের পূজা করতে হবে, এবং তারপর শতরুদ্রিয় মন্ত্রের দ্বারা সেই কলশের জল দিয়ে সেই শিবলিঙ্গের অভিষেক করতে হবে। তারপর একই মন্ত্রে শিবলিঙ্গ কে প্রোক্ষণ করতে হবে। তখনই সেই শিবলিঙ্গ শান্ত হবে - এর দ্বারা আমাদের ব্যাখা কে সমর্থন যোগ্য বলে বিবেচিত হয়, আমরা আগেই বলেছিলাম যে পতিত হওয়া বাণলিঙ্গটি এক স্থানেই অবস্থিত ছিল এবং সেটি একস্থানে রয়েছে বলেই তার উপরে তখন বেদোক্ত শতরুদ্রিয় মন্ত্র দ্বারা অভিমন্ত্রিত জল দিয়ে তার অভিষেক অর্থাৎ স্নান করানো সম্ভব।
তাছাড়া আমাদের শৈব তথা সমগ্র সনাতনীদের প্রাচীন কাল থেকেই মানত্যা রয়েছে যে বেদে পরমেশ্বরে শিবের উদ্দেশ্যে রুদ্রসূক্ত রয়েছে, যা শতরুদ্রিয় নামে পরিচিত, যা স্বয়ং ব্যাসদেব মহাভারতেও উল্লেখ করেছেন, তিনি নিজেই বলছেন, বেদশাস্ত্রে পার্বতীপতি শিবের উদ্দেশ্যে শতরুদ্রিয় সূক্ত রয়েছে
বেদে চাস্য সমাম্নাতং শতরুদ্রিয়মুত্তমম্ ।
নাভানা চানন্তরুদ্রেতি হ্যুপস্থানং মহাত্মনঃ ॥৯৯
ধন্যং যশস্যমায়ুষ্যং পুণ্যং বেদৈশ্চ সম্মিতম্ ।
দেবদেবস্য তে পার্থ ব্যাখ্যাতং শতরুদ্রিয়ম্ ॥১১৭
চরিতং মহাত্মনো দিব্যং সাংগ্রামিকমিদং শুভম্ ।
পঠন্ বৈ শতরুদ্রিয়ং শৃণ্বংশ্চ সততোত্থিতঃ ॥১২০
[তথ্যসূত্র - মহাভারত/দ্রোণপর্ব/সপ্তত্যধিকশততমোঽধ্যায়]
সরলার্থ - যজুর্বেদে রুদ্রের উত্তম শতরুদ্রিয় প্রকরণ বলা হয়েছে এবং এই মহাত্মার অনন্তরুদ্র এই নামে উপাসনার মন্ত্রও কথিত আছে ॥৯৯
হে অর্জুন! ধন, যশ, আয়ুর জনক এবং বেদের তুল্য পবিত্র এই দেবদেব মহাদেবের মাহাত্ম্য স্বরূপ শতরুদ্রিয় তোমাকে বললাম ॥১১৭
যে ব্যক্তি সর্বদা উদ্যোগী হয়ে মহাত্মা উমাপতি শিবের এই যুদ্ধসংক্রান্ত অলৌকিক শুভ চরিত্রর ও পরম পবিত্র শতরুদ্রিয় পাঠ ও শ্রবণ করেন তিনি রুদ্রলোক প্রাপ্ত হন ॥১২০
প্রক্ষিপ্ত বলে উড়িয়ে দেয়া অসনাতনী কদর্য নামাজী ভাইরাসদের একটু ভালো করে এটা বুঝে নেওয়া উচিত।
যাই হোক পরবর্তী শ্লোক গুলি দেখা যাক ]
গিরিজাযোনিরূপম চ বাণং স্থাপ্য¹ শুভম পুনঃ ।
তত্র লিঙ্গম চ তত্স্থাপ্যং পুনশ্চৈবাভিমন্ত্রয়েৎ ॥৩৭
সুগন্ধৈশ্চন্দনৈশ্চৈব পুষ্পধূপাদিভিস্তথা ।
নৈবেদ্যাদিকপুজাভিস্তোষয়েত্পরমেশ্বরম্ ॥৩৮
প্রণিপাতৈঃ স্তবৈঃ পুণ্যৈবাদৈগানৈস্তথা পুনঃ ।
ততঃ স্বস্ত্যয়নং কৃত্বা জয়েতি ব্যাহরেত্তথা ॥৩৯
প্রসন্নো ভব দেবেশ জগদাহ্লাদকারক ।
কর্তা পালয়িতা ত্বং চ সংহর্তা ত্বং নিরক্ষরঃ ॥৪০
জগদাদির্জগদ্যোনির্জগন্তর্গতোহপি চ।
শান্তো ভব মহেশান সর্বাংল্লোকাংশ্চ পালয়² ॥৪১
সরলার্থ : এরপরে যোনিরূপা গিরিজা ও উত্তম বানলিঙ্গ স্থাপনা করে সেই প্রতিষ্ঠিত শিবলিঙ্গ পুনরায় অভিমন্ত্রিত করতে হবে¹ । এরপর সুগন্ধ দ্রব্য, চন্দন, পুষ্প, ধূপ, এবং নৈবেদ্য আদি দ্বারা পূজা করে প্রণাম, স্তুতি, ও মঙ্গলকারী গীত-বাদ্যের দ্বারা পরমেশ্বর কে প্রসন্ন করতে হবে। তৎপশ্চাৎ স্বস্তিবাচন করে ' জয় ' শব্দের উচ্চারণ করা উচিত ও প্রার্থনা করা উচিত - হে দেবেশ! আপনি আমাদের ওপর প্রসন্ন হন; আপনিই সংসারের কর্তা, পালন ও সংহার কর্তাও আপনিই এবং বিনাশরহিতও। আপনি এই জগতের আদি, জগতের কারণ, এবং এই জগতের আত্মস্বরূপও বটে। হে মহেশ্বর! আপনি শান্ত হন আর সমগ্র জগতের পালন করুন²।।৩৭-৪১
[বিশ্লেষণ : (1)
উত্তম বানলিঙ্গ স্থাপনা করে সেই প্রতিষ্ঠিত শিবলিঙ্গ পুনরায় অভিমন্ত্রিত করতে হবে - ভালো করে দেখুন কদর্য আর্যসমাজী নামক অসনাতনী ম্লেচ্ছ যবনেরা চোখ দিয়ে দেখুন, এখানে ছদ্মরূপধারী শিবের হাত থেকে মাটিতে পতিত হওয়া শিবলিঙ্গটিকে বাণলিঙ্গ বলে শব্দ প্রমাণ সহ উল্লেখ করা হয়েছে। আশা করি, এর পর ভুল করেও আর্যনামাজী ম্লেচ্ছ যবনেরা শিবলিঙ্গকে কখনোই শিবের পুরুষাঙ্গ বলে নিন্দা করার সাহস দেখাবে না। কারণ বাণলিঙ্গ বহু আগেই তৈরি করা হয়েছিল শিবের দ্বারা,
🌀 বাণলিঙ্গের কাহিনী হল - বাণ নামক এক শিবভক্ত ছিলেন, তিনি প্রভু শিবকে বহু লিঙ্গ বানিয়ে দিতে বললেন যাতে সে প্রতিদিন নূতন নূতন শিবলিঙ্গের পূজা করতে পারে, তখন পরমেশ্বর প্রায় ১৪কোটি শিবলিঙ্গ বানিয়ে দিলেন বাণকে, সেই লিঙ্গ গুলি নর্মদা নদীর তীরে বাণ পূজা করে তেমনিই রেখে দিতেন, সেই বাণলিঙ্গগুলির নিম্নভাগে বেদি নেই, সেই কারণে সেগুলি শুধুই লিঙ্গভাগই ছিল,
পরমেশ্বর শিব সেই যোনীহীন অর্থাৎ বেদিহীন বাণলিঙ্গ হাতে তুলে নিয়ে সর্বত্যাগী সাধুরূপে তিনি ভক্তদের পরীক্ষা করতে এসেছিলেন। কিন্তু অসনাতনী অগ্নিবীর নামক গাঁজাখোর দয়ানন্দ সরস্বতীর অন্ধচ্যালারা ঠিকঠাক বিচার বিবেচনা না করেই সেই পবিত্র প্রসঙ্গকে অশ্লীলতা বলে প্রচার করতে শুরু করেছে, যার দরুন আজ আমরা শৈব সনাতনীরা এদের পাষণ্ডাচারের খণ্ডন করতে উদ্যত হয়েছি।
(2) আপনি শান্ত হন আর সমগ্র জগতের পালন করুন - এইখানেও পরিষ্কার করে বোঝা যাচ্ছে যে, পরমেশ্বর শিবের সেই বাণলিঙ্গ অগ্নিস্বরূপ ধারণ করে জগতকে বিনাশমুখী করছিলেন লীলাবশত, কিন্তু তাকে সৃষ্টিমুখী করে জগতকে পালন করার জন্য স্তুতি প্রার্থনা করার কথা বলেছেন ব্রহ্মা।
এবং কৃতে বিধৌ স্বাস্থ্যং ভবিষ্যতি ন সংশয়ঃ ।
বিকারো ন ত্রিলোকেহস্মিন্ভবিষ্যতি সুখং সদা ॥৪২
সরলার্থ : হে ঋষিগণ! এই প্রকার অনুষ্ঠান এর ফলে শিবলিঙ্গ অবশ্যই স্থির হয়ে যাবে। তারপর এই ত্রিলোকে আর কোনো প্রকারের উপদ্রব থাকবে না বরং সদা সুখ শান্তি বিরাজ করবে ।।৪২
॥ সূত উবাচ ॥
ইত্যুক্তাস্তে দ্বিজা দেবাঃ প্রণিপত্য পিতামহম্ ।
শিবম তং শরণং প্রাপ্তাঃ সর্বলোকসুখেপ্সয়া ॥৪৩
সরলার্থ - ।।সূত উবাচ।।
ব্রহ্মার উপদেশ শুনে দেবগণ ও ঋষিগণ তাকে প্রণাম করলেন এবং ত্রিলোকের মঙ্গল সাধনে শিবের শরনাপন্ন হন।।৪৩
পূজিতঃ পরয়া ভক্ত্যা প্রার্থিতঃ শঙ্করস্তদা ।
সুপ্রসন্নস্ততো ভুত্বা তানুবাচ মহেশ্বরঃ ॥৪৪
সরলার্থ : ওনারা পরম ভক্তি ভরে সদাশিবের পূজা ও প্রার্থনা করে। তখন তাদের ওপর মহেশ্বর প্রসন্ন হন এবং বলেন ।।৪৪
॥ মহেশ্বর উবাচ ॥
হে দেবা ঋষয়ঃ সর্বে মদ্বচঃ শৃণূতাদরাত্।
যোনিরূপেণ মল্লিঙ্গং ধৃতম চেত্স্যাত্তদা সুখম্ ॥৪৫
পার্বতীং চ বিনা নান্যা লিঙ্গম ধারয়িতুং ক্ষমা ।
তয়া ধৃতং চ মল্লিঙ্গং দ্রুতম শান্তিং গমিষ্যতি ॥৪৬
সরলার্থ :
।। মহেশ্বর উবাচ ।।
হে দেবগণ! হে ঋষিগণ! আপনারা আদরপূর্বক আমার কথা শ্রবণ করুন। যদি এই শিবলিঙ্গ, যোনিপিঠাত্মিকা ( সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের প্রসব করেন যিনি অর্থাৎ উৎস) ভগবতী মহাশক্তির দ্বারা ধারণ করানো যায়, তখনই আপনারা সুখ প্রাপ্ত হবেন। পার্বতী ব্যতীত অন্য কেউ আমার এই স্বরূপ কে ধারণ করতে সমর্থ নয়। সেই মহাশক্তির দ্বারা ধারণ করার পর শীঘ্রই আমার এই নিষ্কলস্বরূপ শান্ত হয়ে যাবে।।৪৫-৪৬
॥ সূত উবাচ ॥
তচ্ছ্রুত্বা ঋষিভির্দেবৈঃ সুপ্রসন্নৈর্মুনীশ্বরাঃ ।
গৃহীত্বা চৈব ব্রহ্মাণং গিরিজা প্রার্থিতা তদা ॥৪৭
প্রসন্নাং গিরিজাং কৃত্বা বৃষভধ্বজমেব চ ।
পুর্বোক্তং চ বিধিং কৃত্বা স্থাপিতং লিঙ্গমুত্তমম্ ॥৪৮
সরলার্থ :
।। সূত উবাচ।।
হে মুনিগণ! তখন এই উপদেশ শুনে দেবতা ও মুনিরা প্রসন্ন হন। তারা ব্রহ্মা কে সাথে নিয়ে দেবী পার্বতীর প্রার্থনা করে আর পার্বতী সহ শিব কে পূর্বোক্ত বিধি দ্বারা স্থাপন করেন, এবং শিবলিঙ্গও স্থাপিত করেন।।৪৭-৪৮
মন্ত্রোক্তেন বিধানেন দেবাশ্চ ঋষয়স্তথা ।
চক্রুঃ প্রসন্নাম গিরিজাং শিবম চ ধর্মহেতবে ॥৪৯
সরলার্থ : এই ভাবে মন্ত্র বিধান অনুসারে সেই দেবতা ও ঋষিগণ ধর্মের রক্ষার্থে শিব তথা পার্বতীকে প্রসন্ন করেন ।।৪৯
সমানর্চুর্বিশেষেণ সর্বে দেবর্ষয়ঃ শিবম্ ।
ব্রহ্মা বিষ্ণুঃ পরে চৈব ত্রৈলোক্যং সচরাচরম্ ॥৫০
সরলার্থ : তৎপশ্চাত সব দেবতা, ঋষিগণ, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, সহ ত্রিলোকের সকলেই শিবের বিশেষভাবে পূজা করেন ।।৫০
সুপ্রসন্নঃ শিবো জাতঃ শিবা চ জগদম্বিকা ।
ধৃতং তয়া চ তল্লিঙ্গং তেন রূপেণ বৈ তদা ॥৫১
লোকানাং স্থাপিতে লিঙ্গে কল্যাণং চাভবত্তদা ।
প্রসিদ্ধং চৈব তল্লিঙ্গং ত্রিলোক্যামভবদং দ্বিজাঃ ॥৫২
সরলার্থ -
তখন শিব ও পার্বতী উভয়ই প্রসন্ন হন। এর পরে দেবী পার্বতী পীঠরূপে সেই শিবলিঙ্গ ধারণ করেন। হে দ্বিজগণ! তখন শিবলিঙ্গ স্থাপন হওয়ার পর ত্রিলোকের মঙ্গল হয় এবং তা সমগ্র বিশ্বে প্রসিদ্ধ হয়ে যায় ।।৫১-৫২
হাটকেশমিতি খ্যাতং তচ্ছিবাশিবমিত্যপি ।
পুজনাত্তস্য লোকানাং সুখং ভবতি সর্বথা ॥৫৩
ইহ সর্বসমৃদ্ধিঃ স্যান্নানাসুখবহাধিকা ।
পরত্র পরমা মুক্তির্নাত্র কার্যা বিচারণা ॥৫৪
সরলার্থ - পার্বতী তথা শিবের সেই বিগ্রহ " হাটকেশ্বর " নামে প্রসিদ্ধ হয়। তার পূজায় সবার সব প্রকারের সুখ প্রাপ্তি হয়। এই লোকে অনেক প্রকারের সুখ সমৃদ্ধি প্রাপ্ত হয় আর পরলোকে উত্তম মুক্তি প্রাপ্ত হয়। এতে কোনো সন্দেহ নেই।।৫৩-৫৪
॥ ইতি শ্রীশিবমহাপুরাণে চতুর্থ্যাং কোটিরুদ্রসংহিতায়াং লিঙ্গস্বররূপকারণবর্ণনং নাম দ্বাদশোধ্যায়ঃ ॥
।।এই ভাবে শিবমহাপুরান অন্তর্গত কোটিরুদ্র সংহিতায় লিঙ্গস্বরূপ বর্ণন নামক দ্বাদশ অধ্যায় সম্পূর্ণ হলো।।
________________উপরোক্ত আলোচনা হতে যা বোঝা গেল তার উপর সিদ্ধান্ত হল এই,
১) পরমেশ্বর শিব এখানে এই লীলার মাধ্যমে দেখালেন যে, অতিথি সৎকার করা অতি আবশ্যক ধর্ম,
২) ইন্দ্রিয়কে জয় না করলে অর্থাৎ ক্রোধ কে সংবরণ না করলে ভক্তিযুক্ত জ্ঞানী ব্যক্তিও অজ্ঞানরূপী অন্ধকারে পতিত হয়ে নিজের বিনাশ ডেকে আনবে,
৩) কারোর বেশভূষা দেখে ব্যক্তিত্ব বিচার করা উচিত নয়, শিবপূজা সকলের অধিকার, তিনি বৈদিক হোক অথবা অবৈদিক, জ্ঞান অর্জন করাই মূল, আত্মজ্ঞানী হওয়াই সর্বোপরি, যিনি আত্মজ্ঞানী নন তার বাহ্যিক পূজাও ব্যর্থ।
৪) উৎপত্তিকালে বাণলিঙ্গের কোনো বেদি বা যোনিপীঠ ছিল না, সেই কারণে এই শিবলিঙ্গের জন্য পীঠ আবশ্যক নয়, কিন্তু বাণলিঙ্গ পূজা করার জন্য পীঠভাগ আলাদা করে এনে তার উপর বাণলিঙ্গ বসানো যেতে পারে, নীচের ছবিতে বানলিঙ্গ দেখুন 👇
শেষে শুধু বেদের অন্তর্গত তৈত্তিরীয় আরণ্যক থেকে শিবলিঙ্গের উল্লেখ ও সেই পবিত্র পরমাত্মা শিবের সত্ত্বাকে প্রণাম জানিয়ে বিশ্লেষণ পর্ব এখানে সমাপ্ত করছি। এটি আমাদের শৈবদের কাছে শিবলিঙ্গসূক্ত নামে সমাদৃত হয়,
ॐ নিধনপতয়ে নমঃ | নিধনপতান্তিকায় নমঃ | ঊর্ধ্বায় নমঃ | ঊর্ধ্বলিঙ্গায় নমঃ |
হিরণ্যায় নমঃ | হিরণ্যলিঙ্গায় নমঃ |
সুবর্ণায় নমঃ |সুবর্ণলিঙ্গায় নমঃ |
দিব্যায় নমঃ | দিব্যলিঙ্গায় নমঃ |
ভবায় নমঃ |ভবলিঙ্গায় নমঃ |
শর্বায় নমঃ | শর্বলিঙ্গায় নমঃ |
শিবায় নমঃ |শিবলিঙ্গায় নমঃ |
জ্বলায় নমঃ | জ্বললিঙ্গায় নমঃ |
আত্মায় নমঃ |আত্মলিঙ্গায় নমঃ |
পরমায় নমঃ | পরমলিঙ্গায় নমঃ |
এতৎসোমস্য সূর্যস্য
সর্বলিঙ্গং স্থাপযতি পাণিমন্ত্রং পবিত্রম্ |
(তথ্যসূত্র- কৃষ্ণ যজুর্বেদ/তৈত্তিরীয় আরণ্যক/১০ম প্রপাঠক/১৬ নং অনুবাক)
অর্ধসত্য প্রকাশে লজ্জাহীন অগ্নিবিড়িখোর সৈনিকদের - শিবকৃপায় প্রথমবার দমানো হল, বাকিটা ইতিহাস...
॥ ॐ নমঃ পার্বতীপতয়ে হর হর মহাদেব ॥
॥ ॐ নমঃ শিবায় ॥
🔥অসনাতনীদের আস্ফালন দমনে - শ্রীনন্দীনাথ শৈব
💥বিশেষ সহযোগিতায় - শ্রীগৌতম রায় ও অভিষেক দত্ত শৈবজী
🚩কপিরাইট ও প্রচারে - International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT









Har Har Mahadev 🙏🔱🕉️
উত্তরমুছুনহর হর মহাদেব।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ issgt কএ সত্যতাকে উম্মুচিত করার জন্য।অপসংস্কৃতিকে দমিয়ে দেয়ার জন্য।
॥ ॐ নমঃ পার্বতীপতয়ে হর হর মহাদেব ॥
উত্তরমুছুন॥ ॐ নমঃ শিবায় ॥
ধন্যবাদ। আমি শিব পুরান পাবো কোথায়? বাংলাদেশ এ নবভারতের টাই শ্লোকসহ আছে।
উত্তরমুছুনহর হর মহাদেব
উত্তরমুছুন